ঘটনা নং ১-
সময় টা ২০১৫ সালের মাঝামাঝি দিক হবে। ৪র্থ শ্রেণির ছেলেদের ক্লাস নিচ্ছিলাম। (উল্লেখ্য আমাদের স্কুলে ছেলে-মেয়েদের ক্লাস রুম আলাদা)। ক্লাসে লিখতে দিয়ে ক্লাস রুমের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাগজ, চিপস এর প্যাকেট দেখে নিজেই সেগুলো ফেলে দিচ্ছিলাম।
হঠাৎ করেই একটা কাগজের লেখার দিকে চোখ পড়ে গেলো!
কাগজটাতে একটা প্রেম পত্র লেখা ছিলো। আর লিখেছিলো ওই ক্লাসের ই এক ছাত্র। নামটা গোপন করেই ঘটনা গুলো লিখলাম।
সোহান নামের ছেলেটা লিখেছে মৌ নামের একটা মেয়ের কাছে, ওই মেয়েটাও ক্লাস ৪ এই পড়ে। যাই হোক কাগজটা হাতে নিতেই মার সেই ছাত্রের চেহারাটা একেবারে মলিন হয়ে গেলো।
আমি সেই প্রেমপত্রটা হাতে নিয়ে ক্লাসের ভিতরেই এদিক ও দিক পায়চারী করছিলাম। ছেলেটা যথেষ্ট মেধাবী ছিলো। ক্লাসের প্রথম দিককার ছাত্র। কি করবো বা কি বলবো এটা ওটা ভাবছিলাম। কি করা যায়?
শাসন নাকি বুঝানো নাকি বাবা মাকে বিষয় টা জানানো!
সেগুলাওই চিন্তা করতে করতে ওই ছেলেটা যথারীতি কান্না শুরু করে দিলো!
আমি একটা অদ্ভুত রকম সমস্যার ভিতর পরে গেলাম। একে তো স্কুলের চাকরীটার বয়স খুব বেশি দিন না। আবার এই রকম ঘটনার প্রথম সাক্ষী।
হঠাৎ করে বলে উঠলাম, সোহান আমি এই বিষয়ে পরে কথা বলি, আর কান্নার কিছু নাই, তুমি তোমার কাজ করতে থাকো।
বারবার বলতেছিলো, স্যার আমার ভূল হয়ে গেছে, এই রকম আর হবে না। প্লিজ স্যার কাওকে বইলেন না।
আমি তখন ওকে কোন ভাবে আশ্বস্ত করলাম, আমি কাওকে বলবো না।
ওই দিন টাতে কাজের চাপে প্রায় ভূলেই গিয়েছিলাম বিষয়টা। চিঠিটা আমার পকেটেই রেখেছিলাম।
যাই হোক, রাত্রিতে ড্রেস চেঞ্জ করতে গিয়ে আবার ওই চিঠিটা নজরে পড়ে।
তখন কিছু ক্ষন চিন্তা করর পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, ওকে আগে একটু জানার চেষ্টা করি, ওর এ ব্যাপারে চিন্তাধারা কি।
যাই হোক প্ল্যান মাফিক আমার ফ্রি টাইমে ওকে ডেকে নিলাম, জিজ্ঞাসা করতেই ও যে সব কথা বললো তাতে আমি নিজেই আকাশ থেকে পড়লাম।
ওর ভাষ্যমতে ওই মেয়েটাকে ও ক্লাস ৩ থেকে পছন্দ করে। আর বিয়েও করতে চায়! (উল্লেখ্য আমি নিজেও এখন ও অবিয়াইত্তা 😰)
বললাম এসব শিখছো কোথা থেকে?
যে উত্তর দিলো তা আমি নিজেই অনুমান করেছিলাম।
সোহানের কথামত, ওর বড় আপু রিলেশন করে, আর ওর ওই বোনটা বেশির ভাগ সময় ওর সামনেই ফোনে কথা বলে, আর টেলিভিশন দেখে প্রচুর।
মূলত এই সব সোর্স থেকেই তার চিন্তাধারায় প্রেম, ভালবাসা, আকর্ষণ ইত্যাদি শব্দের সাথে পরিচয়।
আমরা একটা কথা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করি, শিশুরা বেশিরভাগ সময়ই অনুকরণ করতে পছন্দ করে। এই সময়টাতে একটা ছেলে-মেয়ের সামনে যা করা যাবে, সে তাই করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক ঘটনা।
যেহেতু নিজ পেশা শিক্ষকতা, তাই এই বিষয়গুলো কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না।
তাকে শেষ পর্যন্ত এটা বুঝাতে সক্ষম হলাম, এই সমস্ত কাজ করা উচিৎ না।
আর এখন তার শিক্ষা গ্রহনের বয়স। ওকে পরামর্শ দিলাম বই পড়ো।
বেশ কিছু বই এর নাম বলে দিলাম। যেমন কিশোরকন্ঠ, সাহসী মানুষের গল্প, ছোটদের মহানবী(স) ইত্যাদি।
কারন অন্তত এটা জানি এবং মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, এই সব বই কিছু না করুক, শিশুদের মনে ধর্মীয় অনুভূতি, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখা, নৈতিকতা সৃষ্টি করে। (যদিও তথাকথিত কিছু বুদ্ধিজীবীদের মতে এসব মৌলবাদীদের বই)
সেদিনের মত ঘন্টাব্যাপী পরামর্শ দেওয়া শেষ করলাম।
শিশুদের সামনে যদি ছোটবেলা থেকেই নামাজ, কোরআন শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া যায়, ইতিহাস সাক্ষি কোন শিশু বিপথগামী, আদর্শচ্যুত হয় নি, আর হবেও না।
জ্বাজাকল্লাহু খয়রান।
(ইনশাল্লাহ ধারাবাহিক ভাবে পরবর্তী ঘটনা সমূহ লেখার চেষ্টা করবো)
No comments:
Post a Comment