যেদিন কাক ডাকা ভোরে যখন শিশুটির জন্ম হলো, তখন ঘোর অন্ধকারের ঝাপটা মুখে লেগেছিলো।
নব জন্ম নেওয়া মা তখনও আধা অবচেতন।
মুখটা এমনিতেই কালো, ছোটবেলায় লোকমুখে প্রচলিত ছিল এ মেয়ের কোন দিন বিয়ে হবে না।
সব অন্ধকারের বুকে আলোকপাত করা শিশুটির দিকে তাকিয়ে উপস্থিত বৃদ্ধা বলে যখন বলে উঠলো,
একেবারে মায়ের মত দেখতে হয়েছে!
ধীরগতিতে জ্ঞান ফিরতে শুরু করেছে কিশোরী থেকে মা পরিচয় পাওয়া শিশুটি।
স্কুলের কোন মাস্টারসাব ওর পড়া ধরেছিলো বলে ওর মনে নেই।
মনেও থাকার কথা না, শেষ কবে স্কুলের বারান্দায় পা দিয়েছিলো তাই তো মনে নেই!
কি অদ্ভুত ব্যাপার?
এখন তো মা তার মেয়ের কথা ভাববে! তা না করে স্কুলের কথা কেন?
সহসাই জন্ম নেয় স্বপ্নের ডানা, মেয়েকে সে ঠিকই স্কুলে দেবে! শহরের নামকরা স্কুলে!
অনেক বড় বানাবে!
কিন্তু স্কুলে ভর্তি করাতে তো বাবার নাম লাগে!
সেটা কোথা থেকে দেবে?
চোখের কোণে জন্ম নেওয়া জল আর মনের ভিতরের সব ঝড় থামিয়ে মেয়েটাকে যখন কাছে নিলো,
পৃথিবীর যত শক্তি আছে, সব দিয়ে এক মায়া জড়ানো কান্নার সুর আসতে লাগলো।
মেয়েটার কানে আজানটাও দেওয়া হয়ে উঠে নি।
না ঘরে কোন পুরুষ ছিলো, না পরিচয় ছিলো!
শুধু মানুষ পরিচয়ে কি আর পৃথিবীতে বেঁচে থাকা যায়?
মসজিদের মিনার থেকে আজানের সুর ভেসে উঠছে, মা ভাবে মেয়ের কানে আজানটা এই মূহুর্তে
পৃথিবীর শতশত মিনার থেকে দিচ্ছে!
এদিক ওদিকে আজান ভেসে যায়, মসজিদের দিকে ছুটে চলা মানুষের পায়ের আওয়াজটাও কানে
আসে।
ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যায় আবার!
মেয়েটা কান্না থামিয়েছে অনেক আগে, কান্নার পরে হাঁসি, শুধু হাঁসিটা নেই মায়ের মুখে।
সে নাকি আর মুখ দেখাতে পারবে না, জন্ম নেওয়া শিশুর বাবার নাম জানে না বলে।
অথচ বেড়ে উঠার দিনগুলোতে কবেই বা মুখ দেখাতে পেরেছে।
একদিন দুইদিন তিনদিন পেরিয়ে যায়,
মাস যায় বছর চলে যায়!
আলো?
সে এখনো বন্দী আছে নরকীটদের আস্তানাতে।
এখনও ফিরে আসে নি, আসে নি শিশুর মুখে, আসে নি মায়ের মুখে!
তবুও তার পরিচয় মা!
No comments:
Post a Comment