নিজেকে আবিষ্কার করলাম এক ভয়ংকরভাবে ক্ষুধায় কাতর অবস্থায়। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি খোলা ছাদটার দিকে। আকাশটাই আমার জন্য সুবিশাল ছাদ।
মেঘ আছে বোধহয়, পূর্ণিমা রাতটাতেও ঘুটঘুটে ভুতুড়ে অন্ধকার। সে অন্ধকারে মিলিত হওয়ার কথা ছিলো মেলবোর্ন ফেরত মিতালী মিত্রের সাথে। অথচ আমি অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছি। অবশ্য আলোর বিছানা কখনোই সহ্য হতো না।
মিতালী মিত্র একদিন কথা দিয়েছিলো, আমার আস্তানায় এসে চা খেয়ে যাবে। মিতালী তখনো জানতো না, এই খোলা আকাশের নিচটাই আমার আস্তানা। এখানেই আমি বসতি গেড়ে রেখে দিয়েছি।
অবশ্য জানলে কখনো চা খেতে আসতো কি না জানি না।
উনাকে অবশ্য নির্দিষ্ট করে ঠিকানা দেওয়া হয় নি।
পূর্ণিমা রাতে আমার ঠিকানা থাকে বুড়িগঙ্গার ওই পাড় অথবা জেলখানার তেইশ নাম্বার সিঁড়ি।
আয়োজন করেই চলে যাই। কিঞ্চিৎ বলেছিলাম সে আয়োজনের কথা। মিতালী মিত্র কি আজকে আমাকে খুজবে?
অবশ্য দরকারটা তার, আমার না। কথা দিয়েছিলো সে, আমি দিই নাই। আমি অবশ্য এসবের মধ্যে নাই৷
আমি আজকে শুয়ে আছি তেইশ নাম্বার সিঁড়িতে।
কোন তেইশ নাম্বার সিঁড়ি জানেন? থাক, সবকিছু জেনে লাভ নেই।
কিছু অমীমাংসিত থাকুক, পৃথিবীর সব সৌন্দর্য অমীমাংসিত জাগতিক, মহাজাগতিক বস্তুদের মধ্যেই।
যেদিন তেইশ নাম্বার সিঁড়ির কারণ পৃথিবী জেনে যাবে, সেদিন আমার অস্তিত্ব বিলীন হবে। তেলাপোকা, পিপড়াদের মতো আর্থোপ্রোডা প্রাণীরাও নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে চায়।
তবে আমি বিলীন হবো, সমস্ত জাগতিক বাস্তুবাদকে অমীমাংসিত রেখে। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হবে, ভ্রুক্ষেপ থাকবে না তেইশ নাম্বার সিঁড়ির যাবতীয় রহস্য। উন্মোচিত হওয়ার আগেই বিলীন হওয়ার মধ্যে একটা পৈচাশিক আনন্দ আছে।
এই আনন্দ থেকে নিজেকে অন্তত বঞ্চিত করাটা ঠিক হবে না।
ঠিক বেঠিকের হিসাব আসলে বিচারকের আসান পাওয়ার মতো লাগে।
বিচার করতে আমি তেইশ নাম্বার সিঁড়ির জন্ম দিই নি। দিয়েছিলাম একটা আত্মার গভীরতম বেঁচে থাকার আকুতিভরা টলটলে চোখের জলে পৃথিবীকে ভাসাতে।
অথচ পৃথিবী ভেসে যাওয়ার আগেই আমি ভেসে যাচ্ছি অন্তত অসীম অন্ধকারের মাঝে। অথচ আজকের রাতটাতে আলোতে পূর্ণ থাকার কথা ছিলো।
ভাবতে ভাবতেই সিগারেটের প্যাকেট খুলে সিগারেট মুখে ধরেছি, দেশলাই বাক্স থেকে রাজকীয় অভ্যর্থনা দিয়ে একটা কাঠি বের করলাম। পাশেই কে যেন গোঙ্গাচ্ছে৷ অবশ্য ওদিকে মন, চোখ কোনটাই দিলাম না। আমার সমস্ত ধ্যান জ্ঞান এখন সিগারেটের দিকে। বেশ দামী সিগারেট, তবে দাম জানি না৷ আমার এক ফিলিপাইনের বন্ধু গিফট করেছিলো গত পরশু। আমি আজকের দিনের জন্য রেখে দিয়েছিলাম।
কাঠিটা গুতা দিতেই চোখের ঠিক সামনে, একেবারেই সামনে মিতালী মিত্রের মুখ!
আশ্চর্য কিংবা অবাক হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আমি স্বাভাবিক, কারণ আমি জানতাম, সে আসবে। তাকে আসতেই হবে।
আসতে হবে, আর আসতেই হবে এর ব্যবধানটা 'ই' বর্ণটা করে দেয় নি। করে দিয়েছে জগতের কিছু অমীমাংসিত রহস্য।
সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতেই প্রশ্ন করলাম, এখানে আসতে কোন সমস্যা হয় নি তো? মিতালী মিত্র আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলছে আপনি অবাক হন নি?
এখানেই শেষ না করলেও পারতাম। কিন্তু তাতে আক্ষেপটা থাকতো না।
কিছু আক্ষেপ বয়ে বেড়াক প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম..!
২৩ নাম্বার সিঁড়ির পিছনের আক্ষেপ...!
২৩ নাম্বার সিঁড়ি |
No comments:
Post a Comment